ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫ , ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​তবে কি সোনালি মুরগির মাংস খাওয়া যাবে না?

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ০২:৩৭:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ০২:৩৭:২৫ অপরাহ্ন
​তবে কি সোনালি মুরগির মাংস খাওয়া যাবে না? ​ফাইল ছবি
দেশের বাজারে বহুল প্রচলিত সোনালি মুরগির মাংসে ক্ষতিকর ইশেরেশিয়া কোলাই বা ই. কোলাইc  ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা ঠেকিয়ে দেয়। 

বাংলাদেশের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষকেরা মিলে এই গবেষণা করেছেন। 

সোনালি মুরগি দেশি মুরগি এবং ব্রয়লার মুরগির একটি সংকর প্রজাতি। এর দাম ব্রয়লারের চেয়ে ৫০ শতাংশের মত বেশি, কিন্তু দেশি মুরগির প্রায় অর্ধেক। স্বাদে খানিকটা দেশি মুরগির মত। শুরুতে বাজার পেতে কয়েক বছর লেগে গেলেও এখন সোনালির আলাদা ভোক্তা শ্রেণি তৈরি হয়েছে। অতিথি আপ্যায়নেও এই মুরগির ব্যবহার বেড়েছে। খামার মালিকদের সমিতির হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে গড়ে উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে ৮৫ লাখ সোনালি মুরগি। সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য কি সোনালি মুরগির বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন প্রশ্ন উঠছে।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে। এর শিরোনাম ছিল, ‘Molecular characterization of multidrug-resistant and extended-spectrum beta-lactamase (ESBL)-producing Escherichia coli isolated from Sonali chicken meat in Bangladesh বা বাংলাদেশে সোনালি মুরগির মাংস থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী এবং বর্ধিত স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের আণবিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ।’

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণ। এর মধ্যে বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী ও এক্সটেনডেড-স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের মাধ্যমে মুরগির মাংস দূষণ জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।

এই উৎসেচক তৈরি করার ফলে ব্যাকটেরিয়া বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক যেমন পেনিসিলিন এবং সেফালোস্পোরিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে। এর মানে হলো, এই এনজাইম উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর দ্বারা সহজে ধ্বংস হয় না।

এই বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলা থেকে সংগৃহীত কাঁচা সোনালি মুরগির মাংসের নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিটা-ল্যাকটাম রেজিস্ট্যান্স জিন বহনকারী বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী ইশেরেশিয়া কোলাই শনাক্ত ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা ছিল এই গবেষণার প্রধান লক্ষ্য। 

জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৩৯০টি মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৮ দশমিক ২১ শতাংশ নমুনায় ইশেরেশিয়া কোলাই শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়া এসব ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের মধ্যে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল এনটেরোপ্যাথোজেনিক ই. কোলাই এবং ৯২ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল নন-এনটেরোপ্যাথোজেনিক ইশেরেশিয়া কোলাই।

গবেষকেরা ডিস্ক ডিফিউশন পদ্ধতিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ইশেরেশিয়া কোলাই উৎপাদিত এনজাইমের অ্যামপিসিলিনের বিরুদ্ধে শতভাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া, এরিথ্রোমাইসিনের প্রতি ৮৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোসপোরিনের প্রতিও উচ্চমাত্রায় প্রতিরোধ লক্ষ্য করা গেছে।

সবচেয়ে কম প্রতিরোধ পাওয়া গেছে অ্যামোক্সিসিলিন-ক্ল্যাভুলানেটের (৩ দশমিক ০১ শতাংশ) ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ৪১ দশমিক ৭৩ শতাংশ নমুনায় ইএসবিএল উৎপাদনের বিষয়টি শনাক্ত হয়েছে। 

গবেষকেরা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায়, সোনালি মুরগির খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ও সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব প্রতিরোধ করা যায়।
 
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এইচএইচ/এসকে
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ